মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:১১ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।
শিরোনাম :
মাতারবাড়ি কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকায় নিখোঁজের ৪দিন পর আরমানের লাশ উদ্ধার চকরিয়ায় পুকুরে গোসলে নেমে দুই বোনের মৃত্যু জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দল আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্তের কাজ শুরু করবে মঙ্গলবার, থাকবে এক মাস বাংলাদেশকে ২০০ একর জমি ফিরিয়ে দিচ্ছে ভারত আওয়ামী লীগ হাতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে ‍না পারলে , জনগণ নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবে না।: রিজভী কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর মিছিল ঘিরে সংঘর্ষে নিহত ১ পেকুয়ায় লবণ ব্যবসায়ীকে মারধর করে টাকা ছিনতাই উখিয়া ক্যাম্পে দুর্বৃত্তের গুলিতে ২ যবক নিহত মহেশখালীতে মাংসের দাম অতিরিক্ত রাখায় ৪ ব্যবসায়ীকে জরিমানা নায়িকারা ছোট কাপড় পরলে চলে, ঘরের বউদের চলে না : গোবিন্দের স্ত্রী

অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে কক্সবাজারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন

ভয়েস প্রতিবেদক:

ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে কক্সবাজারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ঈদগাঁওর ফুলেশ্বরী, বাঁকখালী, মাতামুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। বৃহস্পতিবার ভোররাত থেকে নদীর দুই তীর উপচে লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে ঢলের পানি। এতে নদীর তীর ও বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে অগনিত পরিবার।

এদিকে রামু উপজেলায় ঢলের পানিতে ভেসে এই পর্যন্ত শিশুসহ ৩ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এরমধ্যে লাকড়ি কুড়াতে গিয়ে ফঁতেখারকুল ইউনিয়নের লম্বরীপাড়া এলাকার নুরুল কবিরের ছেলে শিশু জুনায়েদ, রাস্তা পার হতে গিয়ে গর্জনিয়ার ছুমছড়ির এলাকার আমজাদ, একই এলাকার রবিউল আলম নিখোঁজ রয়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কাশেম নিশ্চিত করেছেন।

ওয়ার্ড কাউন্সিলর এমএ মনজুর বলেন, বুধবার সন্ধ্যা থেকে মুষলধারে বৃষ্টি নামে। সারারাতের বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় শহরের নিম্নাঞ্চল ও অলিগলি। ভোগান্তিতে পড়ে অনেকে।

বন্যা পরিস্থিতির অবনতির কারণে কক্সবাজারের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশন থেকে একটি ট্রেনও ছেড়ে যায়নি। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে পর্যটকসহ সাধারণ যাত্রীরা।

রেলস্টেশনের মাস্টার মেহেদী হাসান জানান, বন্যা পরিস্থিতির অবনতির কারণে ফেনী ও কুমিল্লা অংশ পানির নিচে রয়েছে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে কক্সবাজার থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। টিকিটের ভাড়া ফেরত দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, অবিরাম ভারি বর্ষণ থাকায় যেকোনো মুহূর্তে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিতে পারে কক্সবাজারের ঈদগাঁও, সদর, রামু, উখিয়া, চকরিয়া-পেকুয়ায়। প্লাবিত হচ্ছে বিভিন্ন উপজেলার অন্তত দু’শতাধিক গ্রামের নিম্নাঞ্চল। এতে কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। কক্সবাজার-টেকনাফ-উখিয়া হাইওয়ের অনেক এলাকা তলিয়ে গেছে।

প্লাবিত এলাকায় বাড়ি-ঘরে পানি প্রবেশ করায় দুর্ভোগে পড়েছে হাজারো পরিবার। অনেক বাড়িতে খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। এতে বৃদ্ধ ও শিশুদের নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছে পরিবারগুলো। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত দুর্গত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছায়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

রামু উপজেলা কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু নোমান জানান, টানা বৃষ্টির কারণে বুধবার সন্ধ্যা থেকে তিন ইউনিয়নের লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। এলাকার রাস্তা-ঘাট, খাল-বিল তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি পানি ঢুকেছে বাসাবাড়িতেও। তাৎক্ষনিক সহায়তার কোন ব্যবস্থা প্রশাসনের ছিল না, এটা দুঃখজনক। ভোগান্তির চেয়ে সরকারি সহায়তা খুবই কম।

সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান বলেন, বাঁকখালী নদীতে ঢল নামায় পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে ইউনিয়নের ২০ থেকে ২৫টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে।

ঈদগাঁও উপজেলার জালাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলমগীর তাজ জনি বলেন, পাহাড়ি ঢলে ফুলেশ্বরী নদীর একাধিক পয়েন্টে বেড়িবাঁধে ভাঙন ধরেছে। সেসব স্থান দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকে ঈদগাঁও বাজারসহ প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এতে আমন ধান ও সবজির আবাদ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

জানা গেছে, চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীবিধৌত বিলছড়ি, সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী, কোনাখালী, পূর্ব বড় ভেওলা, বিএমচরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল এরইমধ্যে কয়েক ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। নদীতে পানির চাপ বাড়তে থাকায় যেকোনো মুহূর্তে তীরের গাইডওয়াল ভেঙে ব্যাপকভাবে লোকালয়ে বানের পানি ঢুকতে পারে।

রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খুদেস্তারীনা জানান, পার্বত্য অববাহিকার বাঁকখালী নদীতে নামা পাহাড়ি ঢলের পানি বুধবার বিকেল থেকে লোকালয়ে ঢুকতে শুরু করে। এতে উমখালীসহ অন্তত ১০ টি গ্রাম পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে টেকনাফ-কক্সবাজার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা।

চকরিয়ার বেড়িবাঁধ প্রসঙ্গে পাউবো উপ-সহকারী প্রকৌশলী জামিল মোরশেদ বলেন, ‘মাতামুহুরীতে বিপৎসীমা অতিক্রম করেই প্রবাহিত হচ্ছে ঢলের পানি। এ অবস্থায় হুমকির মুখে রয়েছে কোনাখালীর কাইজ্জারদিয়া, সিকদার পাড়ার বেড়িবাঁধ। একইভাবে খুটাখালী ইউনিয়নের সমুদ্র উপকূলের বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়ার উপক্রম হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, জুলাইয়ের বন্যায় আমন ধানের বীজতলা নষ্ট হয়ে বড় লোকসান হয়েছিল কৃষকদের। এরপর ক্ষতি কাটিয়ে আবারো বীজ বুনেছে কৃষকরা। এখন সেই চারা তুলে রোপণের সময়। কিন্তু একমাসের ব্যবধানে তৃতীয়বার বন্যার কবলে পড়ে বীজতলা এখন পানিতে তলিয়ে গেছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারি আবহাওয়াবিদ মো. আবদুল হান্নান বলেন, গত কয়েকদিন ধরে কক্সবাজারে মাঝারী ও ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। ২১ আগস্ট দুপুর ১২টা থেকে ২২ আগস্ট ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় সর্বোচ্চ ২৩৫ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত আরো কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। অব্যাহত বৃষ্টিপাতে কক্সবাজারের পাহাড়ী এলাকার কোথাও কোথাও পাহাড় ধসের সম্ভাবনা রয়েছে।

অতিবৃষ্টির কারণে পাহাড় ধসের শঙ্কা রয়েছে জানিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, বন্যার পূর্বাভাসের বিষয় জানিয়ে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পাহাড়ধসের আশঙ্কা থাকায় বসবাসকারী লোকজন যাতে নিরাপদে সরে যায় সে জন্য মাইকিংও করা হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

ভয়েস/জেইউ।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION